বাংলাদেশের আহলুস সুন্নাহর প্রতি শাইখ আবু খাদিজাহর উপদেশ

সালাফি দাওয়াহ বাংলা




মাদের বাংলাদেশি ভাই ও বোনদের প্রতি আমার উপদেশ হলো, আপনাদের উচিত দেশের ফিতনাহ, অরাজকতা ও বিপদের জায়গাগুলো থেকে দূরে থাকা। এমন কিছুই বলবেন না বা করবেন না যা আপনাদের ভূমিতে বিরোধের আগুনে ঘি ঢালতে সহযোগিতা করবে। ঘরকে আঁকড়ে ধরুন, এবং আপনার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পাড়াপ্রতিবেশীকেও অনুরূপ করতে উৎসাহিত করুন। আপনাদের ঘরে অবস্থান করুন এবং আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে ডাকুন, এবং বিনয়ের সাথে তাঁর (আযযা ওয়া জাল) কাছে চান তিনি যাতে বাংলাদেশের লোকেদের ওপর যে মুসিবত আপতিত হয়েছে তা প্রশমিত করে দেন। ভাই ও বোনেরা (আল্লাহ আপনাদের হিফাযাত করুন), আপনারা যে বিপদ ও অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছেন, তার ব্যাপারে ধৈর্য ধরুন। আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন, তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন, আপনাদের ইমান সংরক্ষণ করুন, হতাশ হবেন না— আর তিনি (রাহমানুর রাহিম) আপনাদের এ কষ্ট থেকে কোনো পথ বাতলে দিবেন।


আল্লাহ (জাল্লা ওয়া আলা) বলেছেন:
“হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।”
[আল-বাকারাহ : ১৫৩]

তিনি (আযযা ওয়া জাল) আরো বলেছেন:
“আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, জানমাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাব। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।”
[আল-বাকারাহ : ১৫৫-১৫৭]

ইমাম আল-বারবাহারি (মৃ. ৩২৯হি) বলেন:
“ফিতনাহ যখন আঘাত হানে, নিজেদের ঘরে অবস্থান কর এবং ফিতনাহর আশপাশ থেকে পালাও। আর কোনো দলের প্রতি অন্ধত্ব থেকে সাবধান থাকো। এই দুনিয়াবি জীবনের জন্য মুসলিমদের মধ্যে যে লড়াই সংঘটিত হয় তা ফিতনাহ (বিরোধ)। তাই, এক আল্লাহকে ভয় করো, যার কোনো অংশীদার নেই, এবং তাঁর অনুগত হও– ফিতনাহর ভেতরে প্রবেশ কোরো না, এর মাঝে লড়াই কোরো না, এর মধ্যে পতিত হয়ো না, পক্ষ নিয়ো না, কিংবা একটা পক্ষের প্রতি ঝুঁকে যেয়ো না এবং তাদের বিষয়গুলোর কিছুই ভালোবেসো না।”
ইমাম আহমাদ আল-মুসনাদে (৫/২২৬) বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন:
‘আমার বন্ধু, আবুল-কাসিম, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যদি তুমি কখনো এসব ফিতনাহ ও মুসিবতের মধ্যে পৌঁছাও, উহুদ পর্বতে চলে যাও এবং এর ওপরে তোমার তরবারি ভেঙ্গে ফেল– তারপর তোমার গৃহে অবস্থান করো।”
[শাইখ আল-আলবানি কর্তৃক ‘হাসান’ সাব্যস্ত, আস-সাহিহাহ, ৩/৩৬৯]

নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসন্ন ফিতনাহর সময়গুলোর কথা উল্লেখ করেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) জিজ্ঞেস করেন:

“সে সময় আমার কী করা উচিত, আল্লাহ আমাদের আপনার তরে উৎসর্গ করুন?” তো, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দেন:
“নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে, তোমার জিভ সংযত রাখবে, যা সঠিক তা গ্রহণ করবে, যা ভুল তা এড়িয়ে চলবে, নিজের কাজে মনোনিবেশ করবে, এবং (মানুষের) সাধারণ বিষয়াদিকে এড়িয়ে চলবে।”
[আবু দাউদ : ৪৩৪৩, হাসান, শাইখ আল-আলবানি]

আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি যাতে তিনি বাংলাদেশের আহলুস সুন্নাহর সহায় হন, এবং সেই ভূমির মুসলিমদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, যে পথ নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবাদের পথ– এবং এর মানুষদের যাতে শয়তানের ষড়যন্ত্র ও ইসলামের শত্রুদের থেকে রক্ষা করেন। ইয়া আল্লাহ! বাংলাদেশের জনগণকে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে পথপ্রদর্শন করুন, তাদের অন্তরগুলোকে একতাবদ্ধ করুন, তাদেরকে শক্তিশালী করুন, এবং আপনার তরফ থেকে তাদেরকে নিরাপত্তা, সুখ ও সমৃদ্ধি দান করুন; নিশ্চয়ই আপনিই দানকারী, অতি দয়াবান।

আবু খাদিজাহ আব্দুল-ওয়াহিদ
৬ই আগস্ট, ২০২৪
সোর্স: abukhadeejah
Next Post Previous Post
কোনো কমেন্ট নেই
কমেন্ট করুন
comment url