আকিদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য | শাইখ রাবি
﷽
প্রশ্ন: আকিদাহ (বিশ্বাস) ও মানহাজের (কর্মপদ্ধতি) মাঝে পার্থক্য কী?
শাইখ রাবি বিন হাদি আল-মাদখালি:
“আকিদাহ ও মানহাজের মাঝে পার্থক্য করার বিষয়টি এই যুগে উদ্ভূত হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে লোকেরা আকিদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করতো না। তবে যখন বিপর্যয়ের (ফিতান) আবির্ভাব ঘটে তখন আহলুস সুন্নাহর কেউ কেউ এই দুই বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে বাধ্য হন। কিন্তু শাইখ বিন বায (رحمه الله) আকিদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করতেন না। তাই তিনি বলতেন: “তারা এক ও অভিন্ন।”আর আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি: আকিদাহর তুলনায় মানহাজ প্রশস্ত ও বিস্তৃত, কারণ, আকিদাহ মানহাজের ভেতর চলে আসে। তো, আল্লাহর আসমা (নাম) ও সিফাতের (গুণাবলি) ওপর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হচ্ছে, কুরআন ও সুন্নাহয় ওসব যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই ওসবকে সাব্যস্ত করা। (তাই বলা হয়) আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হলো এটা, বা বুঝের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হলো এটা, কিংবা বর্ণনার (narrations) ক্ষেত্রে এটা আহলুস সুন্নাহর মানহাজ। এটাই তাদের মানহাজ, যেভাবে তাঁরা বুঝেন এবং (কোনো বিষয়ে) সিদ্ধান্তে উপনীত হন — তাঁরা যেভাবে বর্ণনাগুলো সংগ্রহ করেন ও গ্রহণ করেন তা মানহাজের অন্তর্ভুক্ত।” [১]
নোট:
একজন মুসলিম যে পদ্ধতিতে ওয়াহির নুসুস (revealed texts) অধ্যয়ন ও অনুধাবন করে তা মানহাজের অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহর নাম ও সিফাত সম্পর্কিত বাণী বোঝার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হচ্ছে সেগুলোকে সেভাবেই মেনে নেওয়া যেভাবে কুরআন ও সুন্নাহয় বর্ণিত হয়েছে; অত্যাচারী শাসকের সাথে আচরণের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হচ্ছে ধৈর্যশীল হওয়া, প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কথা না বলা এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা; উলামাদের সাথে আচরণের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হচ্ছে তাঁদের সম্মান করা এবং নিজেকে তাঁদের সাথে যুক্ত রাখা; আহলুল বিদআহর সাথে আচরণের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধ সতর্ক করা এবং তাদের সাথে না বসা— ইত্যাদি।
তাই ওয়াহির (অর্থাৎ, কুরআন ও সুন্নাহ) ব্যাপারে বলা হয়, আহলুস সুন্নাহর মানহাজ (কর্মপদ্ধতি) হলো সাহাবাদের মানহাজ— আহলুস সুন্নাহর পথ, তাঁদের বুঝ ও সিদ্ধান্ত, তাঁদের বর্ণনাসমূহ (narrations) প্রাপ্তি এবং গ্রহণ করার পদ্ধতি সাহাবাদের মানহাজের সাথে সম্মতিপূর্ণ। প্রত্যেক যুগের আহলুস সুন্নাহর মানহাজ সাহাবাদের মানহাজ থেকে ভিন্ন নয়। যে কেউ সাহাবাদের মানহাজের বিরোধিতা করেছে সে সুন্নাহর বিরোধিতা করেছে এবং আকিদাহর বিরুদ্ধাচারণ করেছে, কারণ আকিদাহর দাবি হলো আমরা সাহাবাদের পথের অনুসরণ করব।
আল্লাহ বলেন:
“অতএব যদি তারা ইমান আনে, তোমরা (সাহাবাহ) যেরূপে তার প্রতি ইমান এনেছ, তবে অবশ্যই তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা বিমুখ হয় তাহলে তারা রয়েছে কেবল বিরোধিতায়।” [২:১৩৭]
এবং আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা ইমান আনো যেমন লোকেরা (সাহাবাহ) ইমান এনেছে’, তারা বলে, ‘আমরা কি ইমান আনব যেমন নির্বোধরা ইমান এনেছে’? জেনে রাখো, নিশ্চয় তারাই নির্বোধ; কিন্তু তারা জানে না।” [২:১৩]
এবং আল্লাহ বলেন:
“আর যে রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াহ প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের (সাহাবাহ) পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ।” [৪:১১৫]
আর আল্লাহর বাণী:
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।” [৯:১০০]
তাই, এটা জরুরি যে কেউ মানহাজ ও আকিদাহর বিরোধিতাকে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতা ও ধ্বংসাত্মক পথ হিসেবে জানবে। এবং, হয়তো এটাই, এই কারণেই, শাইখুল ইসলাম ইবনু বাযের (রাহিমাহুল্লাহ) মতো উলামারা এই দুয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য করেননি। [২]
ফুটনোট:
[১] আল্লামাহ রাবি বিন হাদি আল-মাদখালির - حفظه الله - বক্তব্য সমাপ্ত, আল-ওয়াসায়া আল-মানহাজিয়্যাহ, পৃ. ৪৩
[২] abukhadeejah.com
MashaAllah!