নির্দিষ্ট কোম্পানি ও পণ্য বয়কট করা

সালাফি দাওয়াহ বাংলা
[১] মূলনীতি হচ্ছে অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা জায়েয, তা যদি শত্রু দেশের কোনো ব্যক্তির সাথেও হয়, যেভাবে ইমাম বুখারি কর্তৃক উল্লেখিত হয়েছে (২২১৬ নং)।

[২] ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইবনু বাত্তাল, নববি ও অন্যান্যরা এর জায়েয হওয়ার ব্যাপারে বলেছেন। এই নীতির ব্যতিক্রম হলো অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে এমন বস্তু।

[৩] সুতরাং, এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বয়কটের বিষয়টি ক্ষতির বিপরীতে লাভের পরিমাপকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।

[৪] পাবলিক বয়কট বনাম ব্যক্তিগত বয়কট

মুসলিম দেশগুলোয় যারা বসবাস করছেন তাদের ক্ষেত্রে, কিবারুল উলামাদের একটা অংশ যেমন লাজনাহ আদ-দায়িমাহ, শাইখ বিন বায, শাইখ ফাওযান এবং অন্যরা মনে করেন শুধু মুসলিম শাসকই পাবলিক বয়কটের ডাক দিতে পারেন; এবং এসব বিষয়ে তাঁর আনুগত্য করতে হবে; এটার কারণ তাঁর বিরোধিতা করা তাঁর কর্তৃত্বকে তুচ্ছ করে এবং বাস্তবে তা মুসলিমদের স্বার্থ ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

স্টারবাকস
সুমামাহ বিন উসালের হাদিস (বুখারি, ৪৩৭২ নং) যেটাকে তাদের বিরুদ্ধে দলিল হিসেবে উল্লেখ করা হয় যারা মনে করে সাধারণ বয়কট শুধু শাসকের স্বেচ্ছাধীন তা আসলে তাদের (যারা উপস্থাপন করে) বিরুদ্ধেই দলিল, সুমামাহ যেহেতু বলেছেন: “যতক্ষণ না নবি (ﷺ) এটাকে জায়েয করছেন।” তারা যদি এ বিষয়ে নবি (ﷺ)-এর সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করে তখন এই যুক্তিটি আরো দুর্বল হয়।

ব্যক্তিগতভবে কেউ কোনো কোম্পানিকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলে তা ঠিক আছে, তবে শর্ত হচ্ছে, তারা যাতে অন্য কাউকে বাধ্য না করে কিংবা মানুষের দ্বীনদারিতা ও ঈমানের ব্যাপারে প্রশ্ন না তোলে, যদি তারা এই অবস্থানের সাথে একমত না হয়, এবং পরিবর্তে এটাকে ইসলামের মৌলিক মাসআলার আলোকে দেখে যা হচ্ছে জায়েয হওয়া।

নির্দিষ্ট পণ্য বয়কটের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের বেলায় ইমাম সাদি ও অন্যান্যরা অর্থনৈতিক বয়কটকে মুসলিমদের সম্মুখীন নির্দিষ্ট ক্ষতি দূরীকরণে বিরোধিতার একটি বৈধ প্রদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

কিবার উলামায়ে সুন্নাহর এরকম আরো কিছু সাধারণ ফাতাওয়া আছে যা বয়কটের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। তবে সেসব থেকে এই উপসংহার টানা ভুল যে তাঁরা মুসলিম ভূখণ্ডের সাধারণ বয়কটকে মুসলিম শাসকের আওতাধীন মনে করেন না, যদি না তা স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়।

[৫] ব্যক্তিগত পর্যায়ে অন্য কাউকে যায়নিস্ট হিসেবে অভিযুক্ত করা— যদি তারা এরকম বয়কটের উপকারিতা দেখতে না পায়— নিশ্চয়ই খুবই বিপজ্জনক। তা মুসলিম দেশে বসবাস করা কারো কর্তৃক পশ্চিমা কোনো মুসলিমকে তাদের হাতে রক্ত আছে বলার মতো যেহেতু তারা ট্যাক্স দেয় (১০-৩৭%) এবং হিজরাহ করতে অস্বীকৃতি জানায়।

একইভাবে, যারা ব্যক্তিগতভাবে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় তাদেরকে অবমূল্যায়ন করাও ভুল ও অগ্রহণযোগ্য।

[৬] কিছু লোক এখন মুসলিমদেরকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বয়কটের ডাক দিচ্ছে। সন্দেহজনক চরিত্রগুলো হজ্ব ও উমরাহকেও বয়কটের ডাক দিয়েছে।

হজ্ব বয়কটের ডাক
নিঃসন্দেহে, এসব স্পর্শকাতর বিষয় যেগুলোকে ইলম ও বাসিরাহ (অন্তর্দৃষ্টি) দ্বারা মোকাবেলা করা প্রয়োজন, অদূরদর্শিতা ও আবেগ দিয়ে নয়। আমরা যদি সত্যিই মুসলিম ঐক্য কামনা করি, তবে কেউ এই কঠিন সময়ে কেন সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাবে?

মুসলিম দেশগুলোকে বয়কট করতে আহ্বান করা যে কারো ব্যাপারে সতর্ক হোন, কেননা সুন্নি ভূমিগুলোতে তাদের ক্ষয়ক্ষতি ও অস্থিরতা ছড়ানোর অ্যাজেন্ডা আছে।

আল্লাহ মুসলিমদেরকে সফলতা দান করুন এবং ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-যাতনা ও ভোগান্তি দূর করুন।

সোর্স: Hikmah Publications
Next Post Previous Post
কোনো কমেন্ট নেই
কমেন্ট করুন
comment url