ফিলিস্তিন সংকট ও ইরানের ভূমিকা

সালাফি দাওয়াহ বাংলা



ফিলিস্তিনের সংকট নিরসনে কেন ইরান বা তাদের প্রক্সি নেটওয়ার্কগুলোর ওপর কখনো আস্থা রাখা যায় না


নবি () বলেছেন:

لَا يُلْدَغُ المُؤمِنُ من جُحْرٍ واحدٍ مرَّتين
“মুমিন একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না।” [১]

 

ই আর্টিকেল লেখার কারণ হলো, আমি কিছু লোককে দেখলাম তারা ইরান বা তাদের প্রক্সি নেটওয়ার্কগুলোর, যেমন “হিজবুল্লাহ” ও হুসিদের প্রশংসা করছে। তাদের একজন আবার বিস্ময়করভাবে এই বাতিল অবস্থানের সমর্থনে ইবনু তাইমিয়্যাহ থেকে পুরোপুরি অপ্রাসাঙ্গিক একটি প্যাসেজ উদ্ধৃত করার চেষ্টা করেছে।


“আমি মাদখালিদের চেয়ে ইরানকে বেশি পছন্দ করি” এবং “হিজবুল্লাহ এই যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করবে” — এধরনের মন্তব্যগুলো শুধু বাতিলই নয়, বরং অত্যন্ত বিপজ্জনকও বটে।

যারা ফিলিস্তিনি সংঘাতে ইরানের ভূমিকার জন্য তাদের প্রশংসা করে, তারা হয় দ্বীন ও ভূরাজনীতি উভয় বিষয়ে অজ্ঞ, অথবা কোনো সন্দেহজনক চরিত্র যাদের উদ্দেশ্য সন্দেহপূর্ণ। দুঃখজনকভাবে, ৭ই অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাযার জনসংখ্যার প্রায় ১% মানুষ নিহত হয়েছে। নিরপরাধ বেসামরিক ব্যক্তিরা সামগ্রিকভাবে প্রতিনিয়ত শাস্তির শিকার হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

এই আর্টিকেলটি কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আহ্বান নয়, শুধু মূল ঘটনা ও বাস্তবতার ব্যাখ্যা, যাতে মুসলিমদের কাছে ইরানি প্রোপাগান্ডার ধূম্রজাল উন্মোচিত হয়।

ইরানের আধ্যাত্মিক পিতা, আল-খোমেনি স্পষ্টভাবে তার লক্ষ্য ব্যক্ত করেছে যে, সে মক্কা ও মদিনা দখল করবে এবং আবু বকর ও উমরের মরদেহকে তাঁদের কবর থেকে তুলবে – যাঁদের সে দুই মূর্তি বলে উল্লেখ করেছে। আর আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

সে বলেছে:
“বিশ্বের ইসলামি ও অনৈসলামি শক্তিগুলো আমাদের শক্তিকে স্বীকার করবে না, যতক্ষণ না আমরা মক্কা ও মদিনার ওপর আমাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও দখল করছি, কারণ এগুলোই ইসলামের কেন্দ্র ও দূর্গ। অতএব, এই স্থানগুলোর উপর আমাদের আধিপত্য একটি প্রয়োজনীয় শর্ত... একজন বিজেতা হিসাবে যখন আমি মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করব, তখন সেই সময়ে আমার প্রথম কাজ হবে নবির কবরের পাশে শুয়ে থাকা এই দুই মূর্তিকে (আবু বকর ও উমর) কবর খুঁড়ে বের করা।”
মুসলিমদের বরকতময় স্থানগুলো দখল করার এবং শিয়া মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার এই লক্ষ্য হাসিলের উদ্দেশে তারা আনন্দের সাথে ফিলিস্তিনি জনগণ, পুরুষ, নারী ও শিশুদের বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করবে।

ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াগুলো ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে সুন্নি মুসলিমদের হত্যা করে আসছে। আরব বসন্ত ইয়েমেনকে দুর্বল করে দিয়েছিল এবং হুসিদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।

ইরানের হুংকার বা তাদের প্রক্সিগুলোর প্রতীকী হম্বিতম্বি সহজ-সরল ও বিশ্বাসপ্রবণ মানুষদের ধোঁকা দিতে পারে, যারা হুসি মিসাইলের মেকি প্রদর্শন বা হাসান নাসরাল্লাহর ফাঁকা বুলিতে উল্লসিত হয়। তবে, যারা তাদের রক্তে রঞ্জিত হাতের শিকার এবং যারা তাদের আকাইদ, ইতিহাস ও ভূরাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তারা বুঝবে প্রকৃত অবস্থা: সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে দুর্বল করার নাটক, বিদ্রোহ ও অভ্যুত্থানের আশা করা এবং এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে শিয়া আধিপত্য বিস্তারে তাদের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা তা আরও এগিয়ে নিতে সাহায্য করা।

ইরানের স্বরূপ সম্পূর্ণরূপে বুঝার জন্য আমরা সংক্ষেপে প্রমাণ করব কেন মুসলিমরা তাদের ওপর ভরসা করতে পারে না: ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও ভূরাজনৈতিকভাবে।


ধর্মীয় কারণ

ধর্মীয়ভাবে, ইরান প্রধানত রাফিদাহ। সুন্নিদের ওপর তাদের নির্যাতনের কথা প্রসিদ্ধ। আকিদাহগত বিষয়াদি, ইবাদাহ ইত্যাদির ক্ষেত্রে তাদের বহু মৌলিক বিভ্রান্তি রয়েছে। তাদের আকিদাহর একটি অংশ হলো নবিজির () সাহাবাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ ও গালিগালাজ করা, এমনকি তাঁর স্ত্রী আয়িশার প্রতিও, যাঁর বিরুদ্ধে তারা অত্যন্ত অশ্লীল অপবাদ দেয়। আরো বিস্তারিত আলোচনার জন্য মুহিবুদ্দিন আল-খতিবের ‘The reality of Shiism’ বইটি পড়ুন। শাইখ বিন বায উপর্যুক্ত বইটির প্রশংসা করেছেন। [২]

নবি () বলেছেন:

آيَةُ الإِيمَانِ حُبُّ الأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الأَنْصَارِ
“ঈমানের লক্ষণ হলো আনসারদের ভালোবাসা, এবং মুনাফিকির লক্ষণ হলো আনসারদের ঘৃণা করা।” [৩]
যে ব্যক্তিই সাহাবাদের অবমাননা করবে, তাকে কোনো মুসলমানের কল্যাণের ব্যাপারে ভরসা করা যাবে না, লক্ষ লক্ষ মুসলমানের জীবন ও কল্যাণের কথা তো বলাই বাহুল্য।


ঐতিহাসিক কারণ

ঐতিহাসিকভাবে, শিয়ারা ইসলামের শত্রুদের সহায়তা করেছে। তা বহু ক্লাসিকাল মুসলিম ইতিহাসবেত্তা ও উলামা কর্তৃক উল্লেখিত হয়েছে।

খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ও আলিম, আল-হাফিয ইবন কাসির বিষয়টি ‘আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহতে’ আলোচনা করেছেন, যেখানে তিনি ইসলামি ইতিহাসের প্রকৃত ঘটনাবলী ও নজিরের ওপর আলোকপাত করেন, যেমন: তাতার বাহিনীর আক্রমণে তাদের সহযোগিতা এবং মুসলিম ও তাদের শাসকদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডারদের সহায়তা করা।

রাফিদাহদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মুসলিমদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল, যারা কৌশলে তাদের স্বরূপ ও প্রকৃত মনোভাব লুকিয়ে রাখত যতক্ষণ না তারা কর্তৃত্ব লাভ করে। তাদের ধর্মের একটি অংশ হলো তাকিয়্যাহ: প্রতারণাপূর্ণ মনোভাব।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেছেন:
“আগে খ্রিস্টানদের জেরুজালেম দখলের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল রাফিদিরা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা মুসলিমরা তাদের কাছ থেকে পুনর্দখল করে নেয়।” [৪]
তিনি বলেন:
“তারা মুসলিম শিশুদের দাসের মতো বিক্রি করেছিল, যেন তাদের সম্পদ।”
একারণেই আমি বলি: তারা ফিলিস্তিনকে (আল্লাহ ফিলিস্তিন ও এর জনগণকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দান করুন) — তাদের শিয়া আধিপত্যের যে বৈশ্বিক অ্যাজেন্ডা রয়েছে, তার বলির পাঁঠা হিসেবে দেখে।

এটা কি বোধগম্য যে তারা ফিলিস্তিনের সুন্নিদের জন্য এতো চিন্তা করছে, অথচ ইরাক ও অন্যান্য দেশে তাদের মিলিশিয়া বাহিনীগুলো সুন্নিদের হত্যা করছিল?


ভূরাজনৈতিক কারণ

পরিশেষে, এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি প্রমাণ করে যে ইরানকে ভরসা করা যাবে না, এখনো না, কখনোই না। ফিলিস্তিনের সংকটেও নয়, না কোনো মুসলিম দেশের স্বার্থের বেলাতেও।

ভয়াবহ 9/11 হামলার পর নিওকনজারভেটিভরা[৫] প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সাদ্দাম হোসেন হয়ে যায় উপযুক্ত নিশানা ও বলির পাঁঠা, যদিও তার সাথে বিন লাদেনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। অদ্ভুতভাবে, সাদ্দাম ছিল একজন আরব জাতীয়তাবাদী, যে “ইসলামিস্ট” আন্দোলন ও তাদের প্রতিনিধিদের ঘৃণা করতো, তাই আল-কায়েদা বা বিন লাদেনের উন্মাদ সমর্থকদের সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।

যাইহোক, নিও-কনরা 9/11’র পর এমন এক ছুতোয় ইরাক আক্রমণের বৈধতা দিয়েছিল যা এখন মিথ্যা ও প্রতারণাপূর্ণ দাবি হিসেবে স্বীকৃত: (তা হলো) গণবিধ্বংসী অস্ত্রের (WMD - weapons of mass destruction) উপস্থিতি। আন্তর্জাতিক আইনকে সুকৌশলে পাশ কাটানোর জন্য এর প্রয়োজন ছিল। সেখানে তখনও কোনো WMD ছিল না, না পরেও কোনোকিছু পাওয়া গেছে। এই যুদ্ধের – যা মিথ্যা ও ধোঁকাবাজির ভিত্তিতে পরিচালিত – ফলে এক মিলিয়নেরও বেশি ইরাকির মৃত্যু ঘটেছিল; এবং ভুলবেন না, এর ফলেই ISIS-এর সৃষ্টি হয়েছিল, এর আগে যাদের কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারে কেন ইরাক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বেশ, এখন এটা সবার জানা যে – এবিষয়ে বইও লেখা হয়েছে (যেমন: The Man Who Pushed America To War) – আহমাদ শালাবি (Ahmad Chalabi) নামক এক ইরানি দ্বৈত গুপ্তচর কংগ্রেস ও সরকারি সদস্যদের সাথে WMD’র (গণবিদ্ধংসী অস্ত্র) নামে ইরাক আক্রমণে উদ্বুদ্ধ করতে লবি করছিল। এমনকি বেশকিছু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এধরনের দাবিকে (WMD’র উপস্থিতি) অনির্ভরযোগ্য জ্ঞান করেছিল। তাই এটি সম্ভবত গুপ্তচরবৃত্তির সবচেয়ে সফল উদাহরণগুলোর মধ্যে একটি বলে চিত্রিত হয়েছে যার ভিত্তিতে ইরান তার কথিত চরম শত্রুর (USA) সহায়তায় ইরাকের ওপর, সামান্যতম ক্ষতি ও খরচ বিনা, নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল।

তখন থেকেই ইরান তার প্রভাব তার সীমান্ত ছাড়িয়ে ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন ইত্যাদিতে প্রসারিত করেছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ইত্যাদির প্রতি ইরানের শ্যন দৃষ্টি।

নিঃসন্দেহে, এই দ্বন্দ্বে বহু পক্ষ সক্রিয়, তাই কীভাবে আপনি প্রতারিত হওয়া এবং আপনার আবেগকে কারো দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেন? এর জবাব হলো, রাগ ও দুঃখ, আরাম ও কষ্ট উভয় সময়ে, সর্বদা সালাফদের বুঝ অনুসারে কুরআন ও সুন্নাহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে।

একদিকে ইরান এবং অন্যদিকে ইসলামবিদ্বেষীরা (Islamophobes), যাদের বহু বট (bot) ও ট্রল ফ্যাক্টরি বিদ্যমান যারা সক্রিয়ভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। তাই, সতর্কতার সাথে পা ফেলুন।

সবসময় চেষ্টা করুন তথ্যের সত্যতা যাচাই করার। আল্লাহ বলেছেন:

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن جَآءَكُمْ فَاسِقٌۢ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوٓا۟ أَن تُصِيبُوا۟ قَوْمًۢا بِجَهَٰلَةٍ فَتُصْبِحُوا۟ عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَٰدِمِينَ
“হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।” [৬]
যদি কোনো বিষয়ে সন্দেহ হয়, প্রবীণ উলামাদেরকে জিজ্ঞেস করুন যারা যুগ যুগ ধরে ইলম ও আহলুস সুন্নাহর মূলনীতিগুলো দৃঢ়তার সাথে অনসরণের ব্যাপারে সুবিদিত। আল্লাহ বলেছেন:

فَسْـَٔلُوٓا۟ أَهْلَ ٱلذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান।” [৭]
আল্লাহ যেন মুসলিম শাসকদের অবস্থা পরিশুদ্ধ করে দেন এবং তাদেরকে আন্তরিক, সৎ নসিহতকারীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত করেন, এবং আল্লাহ যেন মুসলিমদের অবস্থাও সংশোধন করেন যাতে তারা এই উম্মাহর কল্যাণের জন্য সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।

- হাসান সোমালি
Hikmah Publications
১০ নভেম্বর ২০২৩/২৬ রবিউস সানী ১৪৪৫ [৮]

ফুটনোট:
[১] বুখারি ও মুসলিম
[২] আল-মাজমু, ২৮/২৫৭
[৩] বুখারি ও মুসলিম
[৪] মিনহাজুস সুন্নাহ, ৭/৪১৪
[৫] রিপাবলিকান পার্টির সাথে সম্পৃক্ত, যারা বুশ জুনিয়রের শাসনামলে বিশেষভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে
[৬] আল-হুজুরাত: ০৬
[৭] আল-আম্বিয়া: ০৭

Next Post Previous Post
কোনো কমেন্ট নেই
কমেন্ট করুন
comment url