নববর্ষ না পৌত্তলিকতা? | আবুল হাসান মালিক আল-আখদার

সালাফি দাওয়াহ বাংলা



ল্লাহর রাসুল () যখন মদিনায় হিজরত করলেন, তিনি দেখলেন সেখানে মানুষ দুটো উৎসব পালন করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “এ দিন দুটো কী?” একজন জবাব দিল, “দিন দুটি জাহিলিয়্যাহর সময়ে পালিত হতো।” দিনগুলোর উৎপত্তির কথা শুনে নবি () বললেন, “আল্লাহ তোমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম দিয়েছেন: ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।” [১] তো, যেভাবে আমরা আল্লাহর রাসুলের () কাজের মাঝে দেখলাম, কোনো হলিডে, প্রথা ও উৎসবের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা জরুরি। তাহলে ‘New Year’s Resolutions’-এর ভিত্তি কী?


প্রাচীন রোম। ৪৬ খ্রিস্টপূর্ব প্রায়। সম্রাট জুলিয়াস সিজার জানুয়ারির ১ম দিনকে তার নতুন ক্যালেন্ডারের শুরু হিসেবে ধার্য করেন। মাসটিকে Janus-এর নামে নামকরণ করা হয়, যে ছিল শুরু ও শেষের রোমান ঈশ্বর। রোমানরা বিশ্বাস করতো এই “দু-মুখো” ঈশ্বর বিগত বছরের দিকে ফিরে তাকাত এবং সামনের বছরের দিকে এগিয়ে চলত। Janus-এর জন্য উৎসর্গ করার সাথে সাথে তারা তার কাছে আসন্ন বছরে ভালো কাজ করবার প্রতিজ্ঞা করতো। এই প্রচলনটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিকশিত হতে থাকে। পরবর্তীতে, কতিপয় খ্রিস্টান দল ‘New Year’s Eve’-কে তাদের পুরো বছরজুড়ে করা অসৎকর্মের ব্যাপারে চিন্তা-ফিকির করা এবং নতুনটাতে তাদের আচরণ পরিবর্তনের দৃঢ় সংকল্প নেওয়ার একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। সম্প্রতি, এটা মানুষের তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করার বা জীবনে উন্নতিসাধনের স্বার্থে তাদের নিজেদের কাছে সংকল্প করার একটি সেক্যুলার প্রথা হিসেবে রূপ নিয়েছে। (যদিও সাম্প্রতিক একটি স্টাডিতে জানা যায়, সংকল্প করা ঐ মানুষদের মাত্র ৮% বলেছেন তারা বছরের শেষ পর্যন্ত তা চালিয়ে নিতে পারেন।) এভাবেই, ‘New Year’s Resolutions’-এর শেকড় পৌত্তলিকতা, অবিশ্বাস (কুফ্‌র) ও সেক্যুলারিজমে। একজন মুসলিম এসবের সবকিছু থেকেই মুক্ত: শির্‌ক থেকে মুক্ত, কুফ্‌ফারদের অনুকরণ থেকে মুক্ত। মুসলিম তার জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে নিজের উন্নতিসাধনের আশা রাখে, প্রতিদিন ইবাদাহ ও আনুগত্যমূলক আমলের মাধ্যমে তার অভ্যাস বদলানোর সংকল্প করে। আল্লাহ বলেন:

إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا۟ مَا بِأَنفُسِهِمْۗ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” [২]

এ আয়াতের ব্যাপারে আল-আল্লামাহ আস-সাদি (رحمه الله) বলেছেন, “আবিদ (ইবাদাতকারী) যদি তার গুনাহ থেকে আল্লাহর আনুগত্যে ফিরে যায়, আল্লাহ তার অমঙ্গলকে কল্যাণ, সুখ, আনন্দ ও রহমতে বদলে দিবেন।” সুতরাং, মুমিন প্রতিদিনই তার প্রত্যেক খারাপ কাজ থেকে তাওবাহ করার চিন্তায় মগ্ন থাকবে। দোয়ার শক্তি নিয়েও সে সচেতন থাকবে, যেভাবে ইমাম ইবনুল কাইয়িম (رحمه الله) দোয়ার বর্ণনায় বলেছেন— “মুমিনের হাতিয়ার”। নবি () বলেছেন, “পৃথিবীর বুকে যে মুসলিমই আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ (তার দোয়া) কবুল করেন বা তার সমপরিমাণ কোনো ক্ষতি দূরিভূত করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সে এমন দোয়া করে না যাতে গুনাহ বিদ্যমান কিংবা (এমন দোয়া) যা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে।” [৩] এটা তিনি দোয়ার ব্যাপারে বলেছেন, এসব সংকল্পের (Resolutions) ব্যাপারে নয়। তাই, মুমিনের উচিত সালাত, তাওবাহ, আনুগত্যমূলক আমালের প্রতি মনোযোগী হওয়া, যে বিষয়গুলো সত্যিকারার্থে তার জীবন ও অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। [৪]

ফুটনোট:
[১] দেখুন – সুনান আবু দাউদ (১১৩৪ নং), আল-আলবানি কর্তৃক তাঁর পুনঃনিরীক্ষণে এটা ‘সহিহ’ সাব্যস্ত হয়েছে
[২] আর-রাদ : ১১
[৩] ইমাম আহমাদ কর্তৃক তাঁর মুসনাদে সংগৃহীত (২২২৭৮ নং), আল-আলবানি কর্তৃক সহিহুত তারগিব ওহাত তারহিবে ‘সহিহ’ সাব্যস্ত (১৬৩১ নং)
[৪] উস্তায আবুল হাসান মালিক আল-আখদারের X পোস্ট
Next Post Previous Post
কোনো কমেন্ট নেই
কমেন্ট করুন
comment url