একজন মুসলিম কীভাবে রামাদানের শেষ দশ রাত অতিবাহিত করবে? | ড. আবু ওয়াইল মুসা শালিম
﷽
তাকওয়ার মাসের শেষ দশ রাতের সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন
রামাদান অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ, আর এর শেষ দশ রাত আরও বেশি ফজিলতপূর্ণ। তাই মুসলিমদের উচিত এই রাতগুলো কীভাবে কাটাবে তা সঠিকভাবে জানার জন্য সময় বের করা, যাতে তারা এই মহিমান্বিত সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারে—বিশেষত যখন অনেক মুসলিমই এই সময় কীভাবে কাটাবে তা নিয়ে অনবহিত অথবা কী করতে হবে তা নিয়ে অনিশ্চিত।
রামাদানের শেষ দশ রাতে অধিক পরিমাণে দোয়া করা নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম না বলা গেলেও সর্বোত্তম আমলগুলোর একটি।
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেছেন:
“হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি লাইলাতুল কদর পাই, তাহলে আমার দোয়ায় কী বলব?” তিনি (ﷺ) বললেন: “বলো:
বহু বিষয়ের মাঝে এই হাদিসটি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো প্রমাণ করে:
১. এই রাতগুলোতে অধিক হারে দোয়া করা সর্বোত্তম না হলেও নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম উপায়গুলোর একটি।
ইবনু রজব (رحمه الله) এর মন্তব্যে বলেন:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
[অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করুন।]” [১]
বহু বিষয়ের মাঝে এই হাদিসটি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো প্রমাণ করে:
১. এই রাতগুলোতে অধিক হারে দোয়া করা সর্বোত্তম না হলেও নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম উপায়গুলোর একটি।
২. এই রাতগুলোতে ক্ষমা প্রার্থনা করা মুসলিমের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
“এই রাতে (লাইলাতুল কদরে) দোয়া করা আমার কাছে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশি প্রিয়। তবে কেউ সালাত আদায়ের পাশাপাশি আল্লাহর নৈকট্য ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়াও করতে পারে। এ দুটিকে একত্রিত করা যায়।”— সুফিয়ান আস-সাওরি (মৃ. ১৬১ হি.)
তিনি (সুফিয়ান আস-সাওরি, رحمه الله) বোঝাতে চেয়েছেন যে, বেশি দোয়াযুক্ত সালাত কম দোয়াযুক্ত সালাতের চেয়ে উত্তম। (তাই) কেউ যদি সালাত আদায় করে ও দোয়া করে, তাহলে তা ভালো।
নবি (ﷺ) রামাদানের রাতগুলোতে সালাত আদায় করতেন। তিনি ছন্দের তালে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। যখনই তিনি রহমতের আয়াতের সম্মুখীন হতেন, আল্লাহর রহমত চাইতেন; আর যখন শাস্তির আয়াত পড়তেন, আল্লাহর শাস্তি থেকে আশ্রয় চাইতেন। সুতরাং, নবি (ﷺ) সালাত আদায়, দোয়া, তিলাওয়াত ও (তাঁর তিলাওয়াত নিয়ে) চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সময় কাটাতেন। শেষ দশ রাত বা অন্য কোনো রাতেই এই আমলগুলোর চেয়ে উত্তম কোনো আমল নেই। [২]
সালাত আদায় করাও নির্দেশিত (recommended)। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও আল্লাহর সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” [৩]
যদিও রাসুল (ﷺ) রামাদানের শেষ দশ রাতে সালাতের রাকাত সংখ্যা বাড়াতেন না। যেভাবে আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন: “রামাদান বা অন্য কোনো মাসেই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এগারো রাকাতের বেশি সালাত আদায় করতেন না।” [৪] তবে তিনি এই রাতগুলোতে সালাত দীর্ঘায়িত করতেন। বস্তুত, সাতাশতম রাত যত কাছে আসতো, তার সালাত ততো দীর্ঘ হত।
আল-নুমান ইবনু বাশির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন:
যদিও রাসুল (ﷺ) রামাদানের শেষ দশ রাতে সালাতের রাকাত সংখ্যা বাড়াতেন না। যেভাবে আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন: “রামাদান বা অন্য কোনো মাসেই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এগারো রাকাতের বেশি সালাত আদায় করতেন না।” [৪] তবে তিনি এই রাতগুলোতে সালাত দীর্ঘায়িত করতেন। বস্তুত, সাতাশতম রাত যত কাছে আসতো, তার সালাত ততো দীর্ঘ হত।
আল-নুমান ইবনু বাশির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন:
“আমরা রামাদানের তেইশতম রাতে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সাথে রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কিয়াম করলাম। তারপর পঁচিশতম রাতে তাঁর সাথে কিয়াম করলাম, আবার তাঁর সাথে সাতাশতম রাতেও ততক্ষণ কিয়াম করলাম, আমাদের মনে হচ্ছিল যে আমাদের কাছ থেকে আল-ফালাহ (সাহুর) ছুঁটে যাবে।” [৫]
কুরআন তিলাওয়াত করাও শরিয়াহসম্মত, কারণ এটি লাইলাতুল কদরে নাযিল করা হয়েছিল—যা এই শেষ দশ রাতের মধ্যে নিহিত। আল্লাহ বলেন:
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
“নিশ্চয়ই আমি এটি (কুরআন) লাইলাতুল কদরে নাযিল করেছি।” [সুরা আল-কদর, ৯৭:১]
অবশেষে, নুমান বিন বাশির (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, রাসুল (ﷺ) সারা রাত জাগ্রত থাকতেন। তা সুস্পষ্টভাবে আরেকটি হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে। আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন: “শেষ দশ রাত এলে নবি (ﷺ) কঠোর পরিশ্রম করতেন, সারা রাত জেগে থাকতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।” [৬]
সুতরাং, অধিক পরিমাণে দোয়া করা ও তারাবিহর সালাত দীর্ঘায়িত করা নিশ্চিতভাবেই রামাদানের শেষ দশ রাতের পুরোটা সময় অতিবাহিত করার সর্বোত্তম উপায়।
সোর্স: troid.org
ফুটনোট:
[১] তিরমিজি (৩৫১৩) ও ইবনু মাজাহ (৩৮৫০) বর্ণনা করেছেন; শাইখ আল-আলবানি এটিকে সহিহ বলেছেন।
[২] লাতাইফ আল-মাআরিফ, পৃ. ২০৪
[৩] বুখারি (৩৫, ১৯০১, ২০১৪) ও মুসলিম (৭৬০)
[৪] বুখারি (১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯) ও মুসলিম (৭৩৮)
[৫] নাসায়ি কর্তৃক বর্ণিত (১৬০৬); শাইখ আলবানি একে সহিহ বলেছেন।
[৬] বুখারি কর্তৃক বর্ণিত (২০২৪)
ফুটনোট:
[১] তিরমিজি (৩৫১৩) ও ইবনু মাজাহ (৩৮৫০) বর্ণনা করেছেন; শাইখ আল-আলবানি এটিকে সহিহ বলেছেন।
[২] লাতাইফ আল-মাআরিফ, পৃ. ২০৪
[৩] বুখারি (৩৫, ১৯০১, ২০১৪) ও মুসলিম (৭৬০)
[৪] বুখারি (১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯) ও মুসলিম (৭৩৮)
[৫] নাসায়ি কর্তৃক বর্ণিত (১৬০৬); শাইখ আলবানি একে সহিহ বলেছেন।
[৬] বুখারি কর্তৃক বর্ণিত (২০২৪)