এলজিবিটিকিউ আন্দোলন: সমকামিতা ও ইসলাম: সমকামিতার ব্যাপারে মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি
﷽
সমকামিতা (n. Homosexuality): সমলিঙ্গের কারো সাথে যৌন সম্পর্ক।
কুরআনে পাওয়া একটি কাহিনিতে সমকামিতার ব্যাপারে ইসলামের শিক্ষা উল্লেখিত হয়েছে। নবি লুতের (আলাইহিস সালাম) ঘটনা, যিনি সমকামী আচার-আচরণের জন্য তাঁর শহরের পুরুষদের সমালোচনা করেছিলেন। আল্লাহ বলেন:
وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦٓ أَتَأۡتُونَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدࣲ مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِين ٨٠ إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهۡوَةࣰ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمࣱ مُّسۡرِفُون ٨١
“আর (প্রেরণ করেছি) লুতকে। যখন সে তার কওমকে বলল, ‘তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি?’ ‘তোমরা তো নারীদের ছাড়া পুরুষদের সাথে কামনা পূর্ণ করছো, বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী কওম।’’ [১]
কেউ কেউ (যারা সমলিঙ্গ সম্পর্কে জড়িত, বা এর পক্ষে সাফাই গায়) দাবি করতে চেয়েছিল, নিষিদ্ধতা বলতে এখানে (উপর্যুক্ত আয়াতে) সমকামীদের মধ্যকার অসম্মতিমূলক যৌনতাকে (Non-consensual sex) বুঝানো হয়েছে। বাকিদের দাবি, তা বিবাহবহির্ভূত সমকামী সম্পর্ককে বুঝিয়েছে। দুই অভিমতই সুস্পষ্টভাবে আয়াতের সাথে বিরোধিতা করছে, কারণ আল্লাহ বলেছেন: “নিশ্চয়ই, তোমরা তো নারীদের ছাড়া পুরুষদের সাথে কামনা পূর্ণ করছো।” আয়াতটি যদি সমকামী ধর্ষণের (বা অসম্মতিমূলক যৌনতার) কথাও বুঝাতো, তখনো নারীদের বিরুদ্ধে তা সমানভাবে নিষিদ্ধ হতো। অথচ, আল্লাহ (এই আয়াতে) বিষমকামীদের (Heterosexuals) মধ্যকার (বৈবাহিক) যৌনতাকে জায়েয করেছেন। তাছাড়া, আয়াতটিতে যদি শুধু বিবাহবহির্ভূত সমকামী সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমনটা হতো, তাহলে বিবাহবহির্ভূত নারী ও পুরুষের যৌনতাও নিষিদ্ধ, তো আল্লাহ কেন বলবেন: “নারীদের ছাড়া”? সুতরাং, এই আয়াত থেকে যে একটিমাত্র উপসংহার টানা সম্ভব তা হলো, সমলিঙ্গের লোকেদের মধ্যকার যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ।
আল্লাহ (سبحانه وتعالى) বলেন:
أَتَأۡتُونَ ٱلذُّكۡرَانَ مِنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٥ وَتَذَرُونَ مَا خَلَقَ لَكُمۡ رَبُّكُم مِّنۡ أَزۡوَٰجِكُمۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمٌ عَادُونَ ١٦٦
‘‘সৃষ্টিকুলের মধ্যে তোমরা কি কেবল পুরুষদের সাথে উপগত হও, আর তোমাদের রব তোমাদের জন্য যে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে তোমরা ত্যাগ কর? বরং তোমরা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।” [২]
ইবনু আব্বাস বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন:
لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ
“লুতের কওমের কাজ যে করে তার ওপর আল্লাহর লানত, লুতের কওমের কাজ যে করে তার ওপর আল্লাহর লানত, লুতের কওমের কাজ যে করে তার ওপর আল্লাহর লানত।” [৩]
জাবির থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেছেন:
إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي عَمَلُ قَوْمِ لُوطٍ
“আমার উম্মাহর জন্য যে ব্যাপারে আমি সবচেয়ে বেশি ভীত তা হলো লুত সম্প্রদায়ের কাজ।” [৪] (অর্থাৎ, Sodomy বা পায়ুকাম)
লোকেরা যখন নবি লুতের বার্তাকে অগ্রাহ্য করল, আল্লাহ শহরটিকে এর প্রত্যেক সীমালঙ্ঘনকারী সমেত ধ্বংস করে দেন, এবং তিনি লুত (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর কন্যাদেরকে বাঁচান। ঘটনাটি চিন্তাশীলদের জন্য একটি নিদর্শন। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থেও এই কাহিনির উল্লেখ আছে।
ধর্মীয় উৎসের ভিত্তিতে ট্রেডিশনাল মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি
ইতিহাসজুড়ে মুসলিম উলামারা এই কাহিনিকে বুঝেছেন আল্লাহ সমকামিতা, অর্থাৎ, পুরুষে-পুরুষে বিবাহপূর্ব প্রেম (Courtship) ও যৌন সম্পর্ককে পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ করেছেন হিসেবে। মুসলিমরা সমকামিতাকে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা (Unnatural condition), নীতিবিবর্জিত আকাঙ্ক্ষা, এমনকি মানসিক রোগ হিসেবে দেখে যা কল্যাণ ও নৈতিকতার বিচারে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য বিপজ্জনক। ইসলাম শেখায়, একজন মুসলিম দ্বীনদার ও আল্লাহর আনুগত্যশীল হওয়ার সাথে সাথে একজন প্র্যাক্টিসিং সমকামী হতে পারে না; দুটো অবস্থাই পরস্পরবিরোধী। তবে, মুসলিম মতবাদ (Doctrine) সমকামিতার মতো কবিরা গুনাহ চর্চাকারীকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয় না।
শাইখ ইবন বাযকে (আল্লাহ তাঁর ওপর রহম করুন) জানানো হয়, কিছু তরুণ নারীসুলভ আচরণ প্রদর্শন করে। তিনি উপদেশ দেন তারা যাতে পুরুষদের সাথে সময় কাটায় যতক্ষণ না তারা (পুরুষালি আচরণ) শিখছে এবং তা থেকে যাতে তারা উপকৃত হয়, এবং নারীসুলভ প্রবণতা দূর হয়। তাঁকে একজন নওমুসলিমের ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হয় যে ইসলামগ্রহণের আগে ছিল একজন প্র্যাক্টিসিং সমকামী। যখন সে মুসলিম হয়ে যায়, সে ঐ পাপাচারপূর্ণ অনৈসলামিক আচরণ থেকে তাওবাহ করে। কিন্তু, তার দিল সমকামিতা কামনা করে। শাইখ ইবন বায জবাব দেন: “তার উচিত তার তাওবাহর সাথে লেগে থাকা, আর সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।” [৫] তাওবাহর সাথে লেগে থাকার মানে হলো, গুনাহ পরিত্যাগ করা, আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কারণে অনুতপ্ত হওয়া, আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং গুনাহয় ফিরে না যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া।
আজ কিছু লোক মনে করে যে, একজন ব্যক্তি জন্মগতভাবে সমকামী (Born gay) হতে পারে – এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের যৌন প্রবণতার পক্ষে সাফাই গায়। অথচ, ইসলাম শেখায়, প্রত্যেক শিশুই ফিতরাহর – একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি – ওপর জন্মগ্রহণ করে, যার অর্থ, তাদেরকে এমন প্রবৃত্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে যেসবে আল্লাহ মানবজাতির ওপর সন্তুষ্ট এবং যা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কাজকে সম্পূর্ণ করে। এটা মাথায় রেখে, মুসলিম উলামারা উল্লেখ করেন, সমকামিতা স্বাভাবিক অবস্থার বিকৃতির কারণে ঘটে থাকে যার উদ্রেক বিভিন্ন ঘটনা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে হতে পারে, যেমন:
- যে আদর্শের ওপর তাদেরকে গড়ে তোলা হয় যে, দুই লিঙ্গের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই;
- প্রতিনিয়ত সমকামিতার প্রদর্শন এবং এর ফলে তা স্বাভাবিক করে তোলা;
- বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও আকলবিরোধী তত্ত্ব ও আদর্শের ওপর লালিত-পালিত হওয়া (যেমন: শারীরিকভাবে দুটো সমলিঙ্গের মানুষকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কিংবা বংশবৃদ্ধির জন্য “ডিজাইন করা” হয়নি);
- শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হলে তা যৌনতা ও যৌন রুচির ব্যাপারে বিভ্রান্ত চিন্তার দিকে নিয়ে যেতে পারে;
- অল্প বয়স থেকেই স্কুলে বাচ্চাদেরকে এমন আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা (Indoctrination) যা প্রকৃতি, স্বাস্থ্য ও সুস্থতার বিরুদ্ধে যায়;
- স্কুলগুলোতে ছোটবেলা থেকেই অবিরাম সমলিঙ্গ সম্পর্ক (Same-sex relationships) এবং “গে” চরিত্রের ভূমিকায় অভিনয়ে অনুসন্ধিৎসু হতে উৎসাহ প্রদান;
- পশ্চিমে শক্তিশালী LGBTQ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সকল ধরনের ভিন্নমতকে একঘরে করে দেওয়া এবং সেসবকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা;
মুসলিম উলামারা বলেন, যেভাবে মানুষ সমকামী হতে “শিখেছে”, সেভাবে তারা সমকামী না হওয়াও শিখতে পারে, যদি তারা তাদের আচরণ ঠিক করতে চায় এবং সেই প্রক্রিয়ায় সাহায্য পায়; ফলে, তারা তাদের প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরে আসে, অথবা অন্তত সমকামী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে যদি তারা বিষমকামী (Heterosexual) হতে সক্ষম না হয়।
সমকামিতার শাস্তি কী হওয়া উচিত তা নিয়ে কুরআন কিছু বলে না, কিন্তু নবির (ﷺ) একটি বাণী তা স্পষ্ট করে: “তোমরা কাউকে লুত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত পেলে তাকে এবং যার সাথে তা করা হয় তাকে হত্যা করো।” [৬] এই হাদিসটিকে অবশ্যই কোনো ব্যক্তি কর্তৃক সমকামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা সহিংসতা উস্কে দেওয়ার কোনো অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
শরয়ি শাস্তি (হুদুদ) কেবল কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই কার্যকর করা যেতে পারে যে দেশে ইসলামি আইনের চর্চা আছে (অর্থাৎ, কোনো মুসলিম দেশে); এবং যৌনসঙ্গম সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সুস্পষ্ট দলিল থাকতে হবে। মুসলিম ফৌজদারী আইন (Muslim Penal Code) সম্পাদিত অবৈধ কাজের ভিত্তিতে শাস্তি কার্যকর করে, কোনো ব্যক্তির প্রবণতার ভিত্তিতে নয় যেখানে কোনো অবৈধ কাজই সম্পাদিত হয়নি।
শরয়ি শাস্তি (হুদুদ) কেবল কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই কার্যকর করা যেতে পারে যে দেশে ইসলামি আইনের চর্চা আছে (অর্থাৎ, কোনো মুসলিম দেশে); এবং যৌনসঙ্গম সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সুস্পষ্ট দলিল থাকতে হবে। মুসলিম ফৌজদারী আইন (Muslim Penal Code) সম্পাদিত অবৈধ কাজের ভিত্তিতে শাস্তি কার্যকর করে, কোনো ব্যক্তির প্রবণতার ভিত্তিতে নয় যেখানে কোনো অবৈধ কাজই সম্পাদিত হয়নি।
এটা ইসলামের সকল বিখ্যাত উলামা এবং ফকিহর মত, যা (কুরআনে) লুত সম্প্রদায়কে দেওয়া শাস্তি এবং নবির (ﷺ) হাদিসের সাথে মিল রাখে। একজন মুসলিমের জন্য, সে যে দেশেই থাকুক না কেন, তার কাছে গুনাহগার মনে হওয়া কাউকে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা বা অন্যদের তা করতে উস্কানি দেওয়া অনুমোদিত নয়। আইনের বিচারবহির্ভূত প্রয়োগ (Vigilantism) ইসলামি শিক্ষার বিরুদ্ধে যায়, কারণ এটি এক অরাজক, অন্যায় এবং বিশৃঙ্খল সমাজ সৃষ্টি করে।
আজকের মুসলিম যারা সমকামী আচরণে লিপ্ত হয়
কিছু সমকামী আছে যারা নিজেদের মুসলিম মনে করে, এবং তারা জানে যে আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা গুনাহগার, যেমন কিছু মুসলিম আছে যারা ব্যভিচার করে, চুরি করে, মিথ্যা বলে এবং সুদি লেনদেন করে। তারা তাদের গুনাহর স্বীকৃতি দেয়। এসব গুনাহ কুফর হিসেবে গণ্য হয় না যা মুসলিমদের ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়; তবে তারা কবিরা গুনাহগার, আল্লাহর শাস্তির হুমকির অধীন যা তাদের অপরাধের পরিশুদ্ধি।
বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশে সমকামিতা অবৈধ, এবং শাস্তির মধ্যে জরিমানা, কারাদণ্ড থেকে শুরু করে শারীরিক শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত রয়েছে। বিশ্বে ৭৫টিরও বেশি দেশ, মুসলিম ও অমুসলিম, সমকামিতাকে একটি ফৌজদারী অপরাধ (Criminal Offence) হিসেবে গণ্য করে।
কিছু LGBTQ মুসলিম সমলিঙ্গ সম্পর্কের কবিরা গুনাহকে বৈধকরণের চেষ্টা চালায়: জন্মগত গে?!
সাম্প্রতিক সময়ে, লেসবিয়ান (Lesbian), গে (Gay), উভয়লিঙ্গী (Bi-sexual), ট্রান্সজেন্ডার (ইত্যাদি) মুসলিমদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সমকামিতাকে ভুল বলে মনে করে না; তাদের দাবি তারা গে, লেসবিয়ান বা ট্রান্স ইত্যাদি হয়ে জন্মেছে। শুধু তাই নয়, তারা বিশ্বাস করে না যে কুরআন ও সুন্নাহয় আল্লাহ যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন তা বর্তমান যুগের জন্য প্রযোজ্য; অথবা তারা মনে করে এই নসগুলো (Texts) তাদের ওপর প্রয়োগ হবে না যাদের মধ্যে “ভালোবাসা আছে”।
অথচ, মুসলিমরা (প্রায় সবাই) কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট পাঠ্য (নুসুসি) প্রমাণ, নবি (ﷺ) পরবর্তী তিনটি প্রজন্মের ঐকমত্য (ইজমা), ইসলামি ফিকহের চারটি সুপরিচিত স্কুলের সম্মতি এবং সুন্নি উলামাদের মত অনুযায়ী, যা ইসলামি ইতিহাসের ১,৪০০ বছরেরও বেশি সময় জুড়ে বিস্তৃত, সমকামিতাকে গুনাহ বলে মনে করে।
ইসলাম শেখায় যে, মুসলিমদের অবশ্যই আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে, তিনি যা আদেশ দিয়েছেন তা করার মাধ্যমে এবং যা নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে।
একজন মুসলিম যে, ওয়াহির বাণীতে (কুরআন ও সুন্নাহ) সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়গুলোকে বৈধতা (হালাল সাব্যস্তকরণ) দেয়, যেমন: ব্যভিচার, মদপান, জুয়া খেলা অথবা সমকামিতার বৈধতাদান, তাহলে সেই ব্যক্তি ইসলাম ত্যাগ করেছে। সে আর মুসলিম নয়।
তবে, যেসব মুসলিম কবিরা গুনাহ (শির্কের চেয়ে কম) যেমন: ব্যভিচার, ডাকাতি বা সমকামিতায় লিপ্ত হয়, একইসাথে আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে তাদের সীমালঙ্ঘনকে স্বীকার করে, এবং তাদের গুনাহ স্বীকার করে, তারা দ্বীনের মধ্যে থাকে, যদিও বিশ্বাসের (ইমান) দুর্বলতা নিয়ে। এই মানুষগুলো পরকালে আল্লাহর শাস্তির হুমকির সম্মুখীন, যদি না তারা তাদের গুনাহ থেকে তাওবাহ করে। আর যদি তারা জাহান্নামে প্রবেশ করে, সেখানে তারা চিরকালের জন্য থাকবে না।
গুনাহর তাড়না নিয়ন্ত্রণ
মুসলিমদের মধ্যে যারা ফিতনাহ বা অস্বাভাবিক কামনা-বাসনায় আক্রান্ত, তাদের উচিত প্রতিরোধ করতে শেখা, আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, তাঁর কাছ থেকে শক্তি ও হিদায়াহর জন্য দোয়া করা (এবং বিয়ে করা)। তাদের উচিত প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, এবং রামাদানে রোজা রাখা ইত্যাদি। তাদের উচিত সৎ মানুষদের সঙ্গ লাভ করা, তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অবশেষে সেসবকে করায়ত্তে আনা।
প্রত্যেক ইচ্ছা পূরণ করা জরুরি নয়! একজন মুমিনকে তার আত্মাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং তার কামনা-বাসনাকে আল্লাহর আদেশের সীমার মধ্যে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা এমন কঠিন সময়ে বাস করছি যেখানে দ্বীনদারিতা, নৈতিকতা, পবিত্রতা ও সদাচরণ সক্রিয়ভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, আর অনৈতিকতা, খারাপ আচরণ, অধার্মিক আচরণ, অসভ্যতা, যৌন অবক্ষয় ও লাম্পট্য প্রচারিত হচ্ছে।
তবুও, একজন মুসলমানকে অবশ্যই দ্বীনদার থাকতে হবে, এবং মনে রাখতে হবে যে, এই সময়ে ইসলাম, সুন্নাহ এবং ইসলামি নৈতিকতা ও মূল্যবোধে অবিচল থাকা আল্লাহর পক্ষ থেকে ধৈর্যশীলদের জন্য আরও বৃহত্তর পুরস্কার বয়ে আনবে। নবি (ﷺ) বলেছেন:
“মনে রেখো, যা তুমি পেলে না, তা তোমার পাবার ছিল না, আর যা তুমি পেলে তা তুমি না পেয়ে থাকতে না। আরো জেনে রাখো- ধৈর্য্যধারণের ফলে (আল্লাহর) সাহায্য লাভ করা যায়। কষ্টের পর স্বস্তি আসে। কঠিন অবস্থার পর স্বচ্ছলতা আসে।” [৭]
আসন্ন কষ্টের সময়ের প্রসঙ্গে, নবি (ﷺ) বলেছেন,
“তোমাদের সামনে এমন দিন আসবে, যখন দ্বীনকে ধারণ করা হবে জ্বলন্ত অঙ্গার ধরার সমান, এবং যে ব্যক্তি সেই সময়ে তার দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখবে, তার প্রতিদান হবে পঞ্চাশ জনের প্রতিদানের সমান।” সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল, তাদের প্রতিদান পঞ্চাশ গুণ?” তিনি উত্তর দিলেন, “বরং তোমাদের থেকে পঞ্চাশ।” [৮]
আদেশের উদাহরণ: একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, সালাত পড়া, রোজা রাখা, যাকাত (বাধ্যতামূলক দান) দেওয়া, হজ করা, পিতামাতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ ও সদয় হওয়া, দান করা, হিজাব পরা ইত্যাদি।
নিষেধের উদাহরণ: শির্ক, সুদ, ব্যভিচার, মদপান, হত্যা, চুরি, বিবাহপূর্ব যৌনমিলন, সমকামিতা ইত্যাদি।
একজন মুসলিমকে ভালো কাজ করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করতে এবং আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা থেকে তাদের সাবধান করতে আদেশ করা হয়েছে। এভাবে, সে নবিদের পথের অনুসরণ করে।
সোর্স: abukhadeejah.com
ফুটনোট:
[১] সুরা আল-আরাফ: ৮০-৮১
[২] সুরা আশ-শুআরা: ১৬৫-১৬৬
[৩] মুসনাদ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলে বর্ণিত, ৪/২৯২ এবং আহমাদ শাকির কর্তৃক সহিহ সাব্যস্ত; দেখুন, আল-আলবানির আস-সিলসিলাতুস সাহিহাহ, ৬৪৩২ নং, যিনি একে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন
[৪] আত-তিরমিজি কর্তৃক সংগৃহীত, ১৪৫৭ এবং ইবনু মাজাহ, ২৫৬৩, আল-আলবানি হাসান সাব্যস্ত করেছেন
[৫] দেখুন— শারহু বুলুগুল মারাম, কিতাবুল হুদুদ, https://binbaz.org.sa/audios/125/
[৬] ইবন মাজাহ ২৫৬১, তিরমিজি ১৪৫৬
[৭] আহমদসহ অন্যান্য দ্বারা বর্ণিত, আন-নাওয়াওয়ির ৪০ হাদিস, ১৯ নং
[৮] আবু দাউদ, আত-তিরমিজি, ইবনু মাজাহ, আল-হাকিম, যিনি এটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন, আয-যাহাবি সম্মত হয়েছেন এবং আল-আলবানি তাঁর আস-সাহিহাহয় এটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন, ৪৯৪ নং