আমাদের দাওয়াহ

![]() |
© Hikmah Publications |
এটাই আমাদের আকিদাহ (বিশ্বাস) এবং আমাদের দাওয়াহ (আহ্বান) — শাইখ মুকবিল বিন হাদি আল-ওয়াদিঈ (رحمه الله)
১। আমরা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করি। বিশ্বাস করি তাঁর নাম ও গুণাবলিতে, সেসব যেভাবে আল্লাহর কিতাব ও আল্লাহর রাসুলের (ﷺ) সুন্নাহয় উল্লেখিত হয়েছে, কোনোরূপ তাহরিফ (বিকৃতি), তাওয়িল (কাল্পনিক ব্যাখ্যা), তামসিল (একই জ্ঞান করা), তাশবিহ (সাদৃশ্য), এবং তাতিল (অস্বীকার) ব্যতিরেকে।
২। আমরা বিশ্বাস করি, মৃতদেরকে ডাকা ও তাদের কাছে সাহায্য-সহায়তা চাওয়া, এবং একইভাবে জীবিতদের ক্ষেত্রেও, যে বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সক্ষম নয়, তা আল্লাহর সাথে শির্ক। অনুরূপ, আল্লাহর সাথে সাথে বা আল্লাহ ছাড়াই তাবিজ-কবজকে উপকার লাভের মাধ্যম হিসেবে বিশ্বাস করা শির্ক, এবং বিশ্বাস ছাড়া সেসব বয়ে বেড়ানো কুসংস্কার।
৩। আমরা কিতাব ও সুন্নাহকে তাদের বাহ্যিক অর্থে গ্রহণ করি, এবং আমরা কোনো তাওয়িল (কল্পনাশ্রিত অর্থ) করি না, যদি না কিতাব ও সুন্নাহর এমন কোনো দলিল থাকে যা তাওয়িল করা অপরিহার্য করে।
৪। আমরা বিশ্বাস করি, মুমিনরা পরকালে তাঁদের রবকে দেখবেন, সেটা কীভাবে তা জানতে চাওয়া হবে না। আর আমরা শাফাআতে এবং তাওহিদের অনুসারীদেরকে জাহান্নাম থেকে উঠিয়ে নেওয়ার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করি।
৫। আমরা আল্লাহর রাসুলের (ﷺ) সাহাবাদের ভালোবাসি, এবং যারা তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদেরকে ঘৃণা করি। আমরা বিশ্বাস করি, তাঁদের ব্যাপারে মন্দ কথা বলা দ্বীনের ব্যাপারে মন্দ কথা বলার নামান্তর, কারণ তাঁরাই তো তা আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আর আমরা নবি পরিবারকে (আহলে বাইত) ভালোবাসি, যে ভালোবাসা শরিয়াহ কর্তৃক অনুমোদিত।
৬। আমরা আহলুল হাদিস এবং আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত উম্মাহর সকল সালাফদের (পূর্ববর্তীগণ) ভালোবাসি।
৭। আমরা ইলমুল কালামকে (কালামশাস্ত্র) ঘৃণা করি, এবং একে উম্মাহর বিভক্তির সবচেয়ে বড়ো কারণগুলোর একটি মনে করি।
৮। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দ্বারা সুনিশ্চিত নয় এমনকিছু আমরা গ্রহণ করি না, হোক তা ফিকহের কিতাব (ইসলামি আইনশাস্ত্র), তাফসিরের কিতাব (কুরআনের ব্যাখ্যা), প্রাচীন ইতিহাস, কিংবা নবির সীরাহ (জীবনী)। আমরা বুঝাচ্ছি না, আমরা সেসবকে প্রত্যাখ্যান করছি, এও না যে ওসব আমাদের প্রয়োজন নেই। বরং, আমরা আমাদের উলামা, ফকিহ ও অন্যান্যদের উদ্ঘাটনের মাধ্যমে উপকৃত হই। তবে, আমরা সহিহ দলিল ছাড়া কোনো রায় গ্রহণ করি না।
৯। আমরা আমাদের বইগুলোতে, দারসে ও খুতবাহতে কুরআন, সহিহ ও প্রামাণ্য হাদিস ব্যতীত কিছুই লিখি না, উল্লেখ করি না বা বলি না। এবং আমরা অসংখ্য বই ও সতর্ককারী থেকে যে বানোয়াট গালগল্প ও দুর্বল-জাল বর্ণনা নির্গত হয় তা ঘৃণার চোখে দেখি।
১০। আমরা আল্লাহর সাথে শির্ক, নামাজ পরিত্যাগ করা বা রিদ্দাহ (ইসলামত্যাগ) বাদে অন্য কোনো গুনাহর কারণে কোনো মুসলিমকে তাকফির (ইসলাম থেকে বহিষ্কার) করি না। তা থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
১১। আমরা বিশ্বাস করি যে, কুরআন আল্লাহর কালাম (বাণী), এটি সৃষ্ট নয়।
১২। আমরা হকের ওপর যেকোনো মুসলিমের সহযোগী হওয়াকে ওয়াজিব মনে করি এবং জাহিলিয়্যাহর (ইসলামপূর্ব অজ্ঞতার যুগ) বয়ান থেকে আল্লাহর সামনে নিজেদের বিমুক্ত ঘোষণা করি।
১৩। আমরা মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে সঠিক মনে করি না যতক্ষণ তারা মুসলিম। আমরা এটাও মনে করি না, বিদ্রোহ কোনো মীমাংসা এনে দিতে পারে। বরং, তা সমাজকে কলুষিত করে।
১৪। আমরা মনে করি বর্তমানে বিদ্যমান অধিকাংশ দলগুলোই মুসলিমদের বিভক্তি ও দুর্বলতার জন্য দায়ী।
১৫। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাহ বুঝার ক্ষেত্রে আমরা নিজেদেরকে উম্মাহর সালাফদের বুঝের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি, যাঁরা মুহাদ্দিসিনদের অন্তর্ভুক্ত, তাঁদের অন্ধ অনুসারীদের (মুকাল্লিদ) নয়। বরং, হক যেখান থেকেই আসুক, আমরা গ্রহণ করি। আর আমরা জানি, কিছু লোক সালাফি হওয়ার দাবি করে, অথচ সালাফিয়্যাহ তাদের কাছ থেকে মুক্ত, যেহেতু তারা সমাজে এমন কিছু নিয়ে আসে যা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন।
১৬। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি দ্বীনের একটি অংশ, এবং যারা দ্বীনকে রাজনীতি থেকে আলাদা করতে চায় তারা শুধুই দ্বীনের ধ্বংস কামনা করে এবং বিশৃঙ্খলা ছড়াতে চায়। একইভাবে, কিছু ইসলামি দেশে বিস্তৃতি লাভ করা ‘দ্বীন আল্লাহর জন্য, আর রাষ্ট্র মানুষের জন্য’ একটি জাহিলিয়্যাহর বয়ান। বরং, সবকিছুই হতে হবে আল্লাহর জন্য।
১৭। আমরা বিশ্বাস করি যে, মুসলিমরা যতক্ষণ না আল্লাহর কিতাব ও আল্লাহর রাসুলের (ﷺ) সুন্নাহর দিকে ফিরে আসছে, ততক্ষণ তাদের জন্য কোনো সম্মান বা বিজয় নেই।
১৮। আমরা বিশ্বাস করি, সকল মানুষ দুটি দলে বিভক্ত: আল্লাহর দল, যারা ইসলামের বুনিয়াদ ও ঈমানের (বিশ্বাস) বুনিয়াদকে প্রতিষ্ঠা করে। এবং শয়তানের দল, যারা আল্লাহর শরিয়াহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
১৯। আমরা তাদের বিরোধিতা করি যারা সুন্নাহর ইলমকে খাটো করে দেখে, এবং বলে যে— এটি এখন বলার সময় নয়। তদ্রূপ, যারা রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহর ওপর আমল করাকে খাটো করে, তাদেরও আমরা বিরোধিতা করি।
২০। আমাদের দাওয়াহ ও আকিদাহ আমাদের নিজেদের চেয়ে, আমাদের সম্পদ ও আমাদের সন্তানসন্তুতির চেয়েও অধিক প্রিয়। তাই আমরা তা স্বর্ণ বা রৌপ্যর জন্য ছেড়ে দিতে প্রস্তুত নই। আমরা এটা বলছি যাতে করে কেউ আমাদের দাওয়াহকে কিনে নেওয়ার আশায় বসে না থাকে, বা সে এমনটা মনে না করে যে এটি দিনার বা দিরহামের বিনিময়ে কিনে নেওয়া সম্ভব।
২১। আমরা সরকারগুলোকে তাদের মধ্যকার কল্যাণ অনুসারে ভালোবাসি, এবং তাদের অসৎ দিকগুলোর জন্য ঘৃণা করি। আর আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বৈধতা দিই না, যদি না তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট কুফর দেখতে পাই যার জন্য আমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ বিদ্যমান। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সেটার জন্য আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে এবং এর ফলে মুসলমান ও তাদের প্রতিপক্ষের মধ্যে যাতে কোনো গৃহযুদ্ধ বেধে না যায়।
২২। আমরা দিকনির্দেশনা ও উপদেশ গ্রহণ করি তা যেখান থেকেই আসুক না কেন, এবং আমরা জানি যে আমরা তলিবুল ইলম, আমরা কখনো সঠিক হই এবং কখনো ভুল করি। আমরা কখনো অজ্ঞ থাকি এবং কখনো জ্ঞান রাখি।
২৩। আমরা হালের সুন্নাহর উলামাদের ভালোবাসি, তাঁদের কাছ থেকে উপকৃত হওয়ার আশা রাখি, এবং তাঁদের মধ্যে অনেকের ইন্তেকালে ব্যথিত হই।
২৪। আমরা আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের (ﷺ) সুন্নাহ ব্যতীত কোনো ফাতওয়া গ্রহণ করি না।
২৫। এসবই আমাদের আকিদাহ ও দাওয়াহর (আহ্বান) কিছু দিক। দলিল-আদিল্লাহসহ এগুলোর উল্লেখ করা হলে তা বইকে দীর্ঘায়িত করবে। নিশ্চয়ই, আমি এসবের দলিল ‘আল-মাখরাজ মিনাল ফিতনাহয়’ উল্লেখ করেছি। তো, কারো যদি এতে কোনো আপত্তি থাকে, তবে যদি তা সত্য হয়, আমরা উপদেশ গ্রহণ করতে প্রস্তুত এবং যদি ভুল হয়, তাহলে তা খণ্ডন করতে প্রস্তুত, এবং জিদ্বশত প্রত্যাখ্যান হলে তা এড়িয়ে চলতে প্রস্তুত। আর আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
তাই, জেনে রাখুন, এখানে আমাদের দাওয়াহ ও আকিদাহ সম্পূর্ণরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কারণ, আমাদের দাওয়াহ কিতাব ও সুন্নাহ থেকে শুরু হয়ে কিতাব ও সুন্নাহতেই শেষ হয় এবং আমাদের আকিদাহও অনুরূপ। আর আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, এবং ভরসা করার যোগ্যদের মাঝে তিনিই সর্বোত্তম। আর আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই।
সোর্স: Sunnah Publishing, Grand Rapids, Michigan, US (সংক্ষেপিত)